তাকে নিয়ে আলোচনার শেষ নাই। অনেকই বলেন, মিষ্টি মেয়েটি দুষ্টুও বটে। তবে কারো কথার ধার তিনি ধারেন না তিনি। একজন অভিনয়শিল্পী হিসেবেও তিনি নির্ভীক। আর তিনি সত্যিই একেবারে অন্য রকম মেয়ে। সেই মেয়েটি আর কেউ নন, ভারতের পশ্চিম বাংলার অভিনেত্রী স্বস্তিকা মুখার্জি।
সম্প্রতি ভারতের কলকাতায় স্বস্তিকা মুখার্জির নতুন একটি ছবির ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠান হয়ে গেল। পার্থ সেনের অনুব্রত ভালো আছো? ছবিতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন ঋত্বিক চক্রবর্তী ও স্বস্তিকা। সেই সুবাদে কথা বলতে গিয়ে স্বস্তিকা ভরা সভায় বলেন, ‘আমাকে পার্থদা একটি পঞ্চাশ ছুঁই-ছুঁই মহিলার চরিত্রে অভিনয় করতে যখন বলেন, আমি রাজি হয়ে যাই। ছবিটা করি, এর পর যদি আরো বয়স্ক রোল থাকে আমাকে বলতে পারো পার্থদা। আমার বয়স্ক চরিত্রে অভিনয় করতে আপত্তি নেই, রোলটা ভালো হলে।’
সাহসী মন্তব্য। অবশ্য স্বস্তিকার সাহসের অভাব কোনো দিনই বোধ হয় ছিল না। জানা যায়, ঋতুপর্ণ ঘোষের চোখের বালিতে দরকার ছিল এক জমিদার প্রিয়ার। বারাণসীতে মহেন্দ্রর (প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়) বজরা থেকে জমিদার আর তার বিলাসী জীবন দেখতে পাবে বিনোদিনী (ঐশ্বর্য রাই)।
জমিদার প্রিয়া কখনো চুলে তেল মাখে, কখনো বা গান করে বজরার ছাদে বসে। আর বিনোদিনীর পয়েন্ট অব ভিউ থেকে দর্শক তাদের দেখতে পান। স্বস্তিকা তখন নাকি কলেজে পড়তেন। তবুও তিনি এই রোল করতে কোনো দ্বিধা বোধ করেননি। চলে আসেন বারাণসী। শুটিং শেষে ফেরেন ট্রেনে, তাও আবার রিজারর্ভেশন কনফার্ম হয়নি! কিন্তু থামেননি সেই মেয়েটি।
তিনি কাজ করেছেন টিভি পর্দাতেও। যখন তিনি ইতিহাসে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি করছিলেন, তখন থেকে টিভি সিরিয়াল দেবদাসীতে অভিনয় করেন। এরপর তিনি অন্যান্য টিভি সিরিয়ালেও অভিনয় করেন; যেমন এক আকাশের নীচে ও প্রতিবিম্ব। ২০০৩ সালে বড় পর্দায় উর্মী চক্রবর্তী পরিচালনায় হেমন্তের পাখি ছবির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ করেন তিনি। যদিও তিনি ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত প্রথম প্রধান চরিত্র হলো রবি কিনাগী পরিচালিত মাস্তান। মাস্তান ছবির চিত্রগ্রহণ চলাকালীন তিনি তার সহকারী তারকা জিতের সঙ্গে ডেট করা শুরু করেন বলে অভিযোগ ওঠে। তারা একসঙ্গে বেশ কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেছেন; যেমন : ক্রান্তি, কৃষ্ণকান্তের উইল এবং পার্টনার।
সাহস, দুঃসাহস, নিজের জীবনকে নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে চলে এই মেয়েটি। নানা ধরনের চরিত্রে অভিনয় করায় কোনো আপত্তি নেই। জীবনের প্রথম ঋতুপর্ণর ছবিতে নির্বাক চরিত্রে অভিনয় করতে যেমন পিছপা হননি, তেমনি কদিন আগে মৈনাক ভৌমিকের টেক ওয়ান-এ অভিনেত্রী মা ও মেয়ের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন ফুটিয়ে তুলতেও তার অসুবিধা হয়নি একবারও। বারবার নিজের লুক, নিজের ভোল পাল্টাতে থাকেন স্বস্তিকা। চুল কেটে ফেলতে তার কোনো দ্বিধা নেই। সাম্প্রতিক ছবির জন্য করা তার চুলের ছাঁট নিয়ে যতই জল্পনা হোক না কেন, স্বস্তিকা কিন্তু অবিচল।
সম্প্রতি এ অভিনেত্রীকে নিয়ে হইহই রব ওঠে বলিউডে। বহুল আলোচিত সিনেমা ব্যোমকেশ বক্সীতে একটি চুম্বনের দৃশ্যে অভিনয় নিয়ে এই আলোড়ন। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর ছাপা হয়, ছবিটির পাত্রপাত্রী এমন একটি চুম্বনদৃশ্যে অভিনয় করেছেন, যা এযাবৎকালে সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের চুম্বন। ছবিটিতে তার সহশিল্পী সত্যান্বেষী, সুশান্ত সিং রাজপুত।
তবে এত কিছুর পরেও কিছু যায়-আসে না স্বস্তিকার। স্বাধীনচেতা মেয়েটির ব্যক্তিগত জীবনেও রয়েছে নানা ক্লাইমেক্স। তার জন্ম ১৯৮০ সালের ১৩ ডিসেম্বর কলকাতায়। ১৯৯৮ সালে ১৮ বছর বয়সে তিনি বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী সাগর সেনের পুত্র পারমিত সেনের সঙ্গে সাত পাকে বাঁধা পড়েন। কিন্তু তাদের বিবাহিত জীবন সুখের ছিল না। দম্পত্য জীবন থেকে পৃথক হওয়ার আগে মাত্র দুই বছর দীর্ঘস্থায়ী ছিল তাদের সংসার। তার একমাত্র মেয়ে অন্বেষার জন্ম ২০০০ সালে।
সেই জীবন পেছনে ফেলে এসেছেন অনেক আগেই। এর পরও বহু বিতর্কিত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছেন হরহামেশাই! জিতের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার কাহিনি শেষ হওয়ার পর শুরু হয় পরমব্রতর চ্যাপ্টার। তার সঙ্গে জুটি গড়লে সেখানেও তাদের নিয়ে নানা গুজব ছড়িয়ে পড়ে। সেই কাহিনি সম্পর্কেও এখন আর কিছু শোনা যায় না। তবে সর্বশেষ এ বছরের ২৫ এপ্রিল রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে তার বোন ও আরো দুজন একটি হাসপাতালে সকালের দিকে ভর্তি করান। জানা যায়, লেট নাইট পার্টি করার সময় তিনি পড়ে যান। সে সময় হাতে থাকা গ্লাস ভেঙে কাচের টুকরো তার হাতে ঢুকে যায়। মাথায়ও বেশ আঘাত পান। অল্পের জন্য বেঁচে যান স্বস্তিকা। অবশ্য পরে মিডিয়ায় প্রকাশ পায়, তিনি এক স্ক্রিপ্ট রাইটারের সঙ্গে লিভইন করতেন। তার সঙ্গে ঝামেলা হওয়ার পরই তিনি আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তার এমন খামখেয়ালিপনায় দারুণ ধাক্কা খায় মিডিয়া।
ব্যক্তিজীবন সম্পর্কে যতটাই উদাসীন হোন না কেন ক্যারিয়ার নিয়ে যে তিনি দারুণ সচেতন তা তার ঝুলি হাতড়ালেই বোঝা যায়। এখন পর্যন্ত দারুণ দারুণ সব ছবি উপহার দিয়েছেন দর্শকদের। সেই তালিকায় আছে সৃজিত মুখোপাধ্যায়ের জাতিস্মর, মিশর রহস্য, মৈনাক ভৌমিকের মাছ মিষ্টি অ্যান্ড মোর, আমি ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড, অনীক দত্তের ভূতের ভবিষ্যৎ, রাজা সেন পরিচালিত কৃষ্ণকান্তের উইল প্রভৃতি ব্যতিক্রমী সব সিনেমা। সব মিলিয়ে বলাই যায়, স্বস্তিকা সত্যিই অন্য রকম মেয়ে।
No comments:
Post a Comment