ভারতে সুপ্রিম কোর্টের এক রায়ের ফলে বলিউডে এই প্রথম বার মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে কাজ করার সুযোগ পেতে যাচ্ছেন মহিলারা- যে কাজ এতদিন ছিল পুরুষদের একচেটিয়া। মুম্বাইয়ের ফিল্ম ইন্ডাস্টিতে গত ৬০ বছর ধরে মেকআপ আর্টিস্ট হিসেবে মেয়েদের কাজ করা নিষিদ্ধ ছিল। এর পেছনে ছিল এখানকার শক্তিশালী ট্রেড ইউনিয়নগুলো। তাদের যুক্তি ছিল, এর ফলে পুরুষরা কাজের সুযোগ হারাবেন।
সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, মেয়েদের এ কাজ করতে না দেয়াাটা অসাংবিধানিক। বিচারপতি দীপক মিশ্র এবং বিচারপতি ইউ ইউ ললিত তাদের দেয়া রুলিংএ বলেন, এটা এমন এক ধরণের বৈষম্য যা সাংবিধানিকভাবে অনুমোদনযোগ্য নয়। আমরা আর ১৯৩৫ সালে বাস করছি না। এটা ২০১৪ সাল। এই নিয়ম আর একদিনের জন্যও বহাল থাকতে পারে না। রায়ে বলেন বিচারকরা।
মুম্বাইয়ের চলচ্চিত্র শিল্পে এর আগে মেয়েরা হেয়ার স্টাইলিস্ট বা ‘কেশসজ্জা’র কাজ করতে পারতেন। কিন্তু মেকআপ – যাকে বাংলায় বলা হয় ‘রূপসজ্জা’ – ছিল তাদের জন্য নিষিদ্ধ। মেকআপ করার চেষ্টা করলে মেয়েদের হুমকি দেয়া হতো – এমনকি আক্রমণের শিকারও হতে হতো তাদের।
মুম্বাইয়ের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতা-অভিনেত্রী এবং পরিচালকরাও এই নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সফল হন নি। ভারতের ‘সিনে কস্টিউম মেকআপ আর্টিস্টস এন্ড হেয়াড্রেসার্স এসোসিয়েশন’ ছিল এমনই শক্তিশালী।
এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মামলা করেন চারু খুরানা নামে একজন মহিলা মেকআপ আর্টিস্ট। যিনি মেকআপের কাজ শিখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্কুলে – কিন্তু নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি কাজের সুযোগ পাচ্ছিলেন না।
তিনি বলেন, আমি দু চারটে ছবিতে কাজ করেছি কিন্তু এটা খুবই কঠিন। কারণ ইউনিয়নগুলো খুবই শক্তিশালী এবং মহিলা মেকআপ আর্টিস্ট কাজ করছে শুনলে তারা সেটে ঢুকে ছবির কাজ বন্ধ করে দেয়।
যে প্রযোজকরা এই নিয়ম ভাঙতেন তাকে মোটা টাকা জরিমানা দিতে হতো, অভিনেত্রীদের অনেকের শাস্তি হিসেবে ফিল্ম টাইটেলে নাম দেয়া হতো না। কখনো কখনো মহিলা মেকআপ-শিল্পী আনা হতো লুকিয়ে, কারণ ইউনিয়নগুলো টের পেলে তারা ছবির কাজ বন্ধ করে দিতে পারতো। দক্ষিণ ভারতে তামিল ও তেলেগু ফিল্মের জগতেও ছিল একই নিয়ম।
মহিলা মেকআপ আর্টিস্টরা সিনেমায় কাজ করতে পারেন না বলে তারা এতদিন ফ্যাশন শো, বিজ্ঞাপন, এবং বিযয়ের কনে-সাজানোর মতো কাজেই নিজেদের সীমিত রাখতেন।
No comments:
Post a Comment