counters

Monday, November 3, 2014

অনিশ্চয়তায় চার কোটি শিক্ষার্থী, এক সপ্তাহে পেছাল ১১ পরীক্ষা

জামায়াতে ইসলামীর ডাকা একের পর এক হরতালে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছে দেশের প্রাথমিক থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত প্রায় চার কোটি শিক্ষার্থী। এক সপ্তাহের মধ্যে পাবলিক পরীক্ষাসহ কমপক্ষে ১১টি পরীক্ষা পিছিয়েছে। বিশেষ করে শিক্ষাবর্ষের শেষ সময়ে এসে পরীক্ষাগুলো নিয়ে চরম বেকায়দায় পড়েছে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষা প্রশাসন।


জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা শুরুই করা যাচ্ছে না। ইতিমধ্যে প্রথম দুই দিনে চারটি পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী ও বিদ্যালয়গুলোর বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতিও থমকে গেছে। পিছিয়ে যাওয়া পাবলিক পরীক্ষা বন্ধের দিনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও বার্ষিক পরীক্ষাগুলোর প্রস্তুতির ঘাটতি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে উদ্বিগ্ন সংশ্লিষ্ট সবাই। 
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দলের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে গত বৃহস্পতি, গতকাল রোববার ও আজ সোমবার হরতাল পালন করছে জামায়াত। আরেক নেতা মীর কাসেম আলীর মৃত্যুদণ্ডের প্রতিবাদে ৬ নভেম্বর হরতাল আহ্বান করা হয়েছে। আবার দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে করা আপিলের রায়ও হবে আজ। রায় বিপক্ষে গেলে বুধবারও হরতাল দিতে পারে দলটি। ফলে এক সপ্তাহ ধরে স্থবির হয়ে পড়েছে শিক্ষাকার্যক্রম। 
রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে জেএসসি পরীক্ষা দেওয়া এক পরীক্ষার্থীর মা শাহানা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, হরতালের আগে তাঁর সন্তানের প্রস্তুতি ভালো ছিল। কিন্তু এখন আর পড়তে চাচ্ছে না, অন্যমনস্ক হয়ে গেছে। এতে বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে। প্রথম আলোয় ফোন করেও একাধিক অভিভাবক তাঁদের উদ্বেগের কথা জানান। 
জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, হরতালে শিক্ষায় ‘শিডিউল বিপর্যয়’ দেখা দিয়েছে। স্কুলের বিভিন্ন পরীক্ষা, বার্ষিক পরীক্ষা, পাবলিক পরীক্ষা—সবকিছু এলোমেলো হয়ে হয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অভিভাবকেরা যেমন উদ্বিগ্ন, তার চেয়ে বেশি সমস্যা হলো শিক্ষার্থীরা হতাশ হয়ে পড়ছে। এর পরিণতি যে কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা বলা কঠিন। 
রাশেদা কে চৌধূরীর মতে, এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য কঠিন রাজনৈতিক অঙ্গীকার দরকার। শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হয়, এমন কর্মসূচি দেবেন না বলে রাজনৈতিক নেতাদের অঙ্গীকার নেওয়া দরকার। 
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, বর্তমানে প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে মোট শিক্ষার্থী প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ। এর বাইরে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে আরও প্রায় ৩০ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের এখন পরীক্ষার সময়। গতকাল থেকে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও হরতালের কারণে তা পিছিয়ে ৭ নভেম্বর এবং আজকের পরীক্ষা ১৪ নভেম্বর নেওয়া হয়েছে। ৬ নভেম্বরের পরীক্ষার দিনও হরতাল রয়েছে। এদিন জেএসসির ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র ও জেডিসির আরবি দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষা হওয়ার কথা। ফলে এই দুই পরীক্ষায় প্রায় ২১ লাখ পরীক্ষার্থী বিপদে পড়েছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে হরতালের কারণে বৃহস্পতিবারের পরীক্ষাও পেছানো হচ্ছে। আজ এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। 
জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন ‘আমরা শিক্ষাব্যবস্থাকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। কিন্তু পরীক্ষার মৌসুমে হরতালের কারণে বিরাট বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। জামায়াতে ইসলামী অযৌক্তিকভাবে হরতাল দিয়ে শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করছে। যুদ্ধাপরাধ করে তারা পাপ করেছিল, এখন সেই পাপের রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল দিয়ে আবার অপরাধ করছে। এ জন্য তাদের বলব হরতাল বন্ধ করুক।’
হরতালে পরীক্ষা হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত শিক্ষার্থীদের সর্বনাশ করছে। কিন্তু আমরা তো শিক্ষার্থীদের হিংসাত্মক কর্মকাণ্ডের মুখে ফেলে দিতে পারি না। এ জন্য পরীক্ষার সময় পরিবর্তন করতে হচ্ছে।’
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, ২৩ নভেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা। এই দুই পরীক্ষায় মোট পরীক্ষার্থী প্রায় ৩০ লাখ। তারাও পড়েছে বিপাকে।
সেশনজটে জর্জরিত জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পড়েছেন আরও বেশি সমস্যায়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। হরতালের কারণে ইতিমধ্যে সম্মান প্রথম বর্ষের তিনটি, চতুর্থ বর্ষের একটি ও ইলেকট্রনিকস অ্যান্ড কমিউনিকেশনের একটি পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও কলা অনুষদের ভর্তি পরীক্ষাও পিছিয়ে গেছে।
জানতে চাইলে অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির প্রথম আলোকে বলেন, হরতালের কারণে এর আগেও শিক্ষার্থীদের সমস্যায় পড়তে হয়েছে। তাই রাজনৈতিক নেতাদের সমঝোতা করে এই হরতাল বন্ধ করা উচিত।

No comments:

Post a Comment