ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প ও শস্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে এসে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত করতেই হবে। একটি মানুষও না খেয়ে কষ্ট পাবে না। যেভাবেই হোক মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিতে হবে।”
তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ গবেষণায় থোক বরাদ্দ দিয়েছিল। এর ফল বাংলাদেশ এখন পাচ্ছে। ২০১২ সালে বাংলাদেশের চাল আমদানি করতে হয়নি, বরং ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল শ্রীশঙ্কায় রপ্তানি করেছে।
২০১৪ সালে দেশে তিন কোটি ৬৮ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হবে বলেও বৈঠকে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বৈঠকের শুরুতেই খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অগ্রগতি সরকার প্রধানের সামনে তুলে ধরেন। তিনি জানান, চলতি বছর ১.৫ পাঁচ লাখ মেট্রিক টন গম এবং ১৫ দশমিক ৬৮ লাখ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহ করা হয়েছে। রোববার পর্যন্ত দেশে ১১ লাখ ৩২ হাজার ২০২ মেট্রিক টন চাল এবং দুই লাখ ২৬ হাজার ৭১৩ মেট্রিক টন গমের মজুদ রয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় তিন লাখ মেট্রিক টন বেশি।
মন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতি মেট্রিক টন গমের দাম ৩২২ ডলার হলেও বাংলাদেশ ইউক্রেইন থেকে ২৯৭ দশমিক ৫০ডলার দরে গম কেনার চুক্তি করেছে।
প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কৃষিভিত্তিক খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প গড়ে তোলায় গুরুত্ব দিয়ে বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সরকারের দায়িত্ব। সেজন্যই আমরা কাজ করে যাচ্ছি।”
এলাকাভিত্তিক ফসল উৎপাদন এবং তা সংরক্ষণের পাশাপাশি শস্যের বহুমুখীকরণের কথাও তিনি।
তিনি কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি উৎপাদিত শস্যের সুষ্ঠু বাজারজাতকরণ নিশ্চিত এবং কোন খাদ্যে কী পুষ্টি আছে- তা প্রচার করতে মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী।
কৃষিতে ভর্তুকির বিষয়ে উন্নয়ন সহযোগীদের বিরোধিতার পরও বর্তমান সরকারের সময়ে কৃষককে ভর্তুকি মূল্যে সার, বীজ, যন্ত্রপাতি এবং বছরে প্রায় ১৪ হাজার কোটি টাকা কৃষি ঋণ দেওয়ার কথাও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
“অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা কৃষিতে ভর্তুকির বিরোধিতা করে। ছিয়ানব্বইয়ের নির্বাচনের আগে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এখানে যে আছে, সে আমার কাছে বিশাল এক তালিকা নিয়ে আসে। এর মধ্যে, কৃষিতে ভর্তুকি বন্ধের কথা ছিল। আমি তখন তাকে বলি, ঠিক আছে। আমরা আমাদের নিজেদের টাকায় কৃষকদের ভর্তুকি দেব।”
“উন্নত দেশে কৃষকদের অনেক রকম সহায়তা দেওয়া হয়। কিন্তু আমাদের সময়ই অসুবিধা”, বলেন তিনি।
দশ টাকায় কৃষকদের জন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সহজ শর্তে ঋণের সুযোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বড়লোকরা ব্যাংকের টাকা নিলে শোধ দেয় না। মিলিটারি ডিকটেটরদের সময় থেকে এই কালচার শুরু। গরিব কৃষক ঠিকই টাকা ফেরত দেয়।”
No comments:
Post a Comment