counters

Saturday, November 8, 2014

হাসছে সাকিব হাসছে দেশ

হাসছে সাকিব হাসছে দেশ


‘যদি লক্ষ্য থাকে অটুট, দেখা হবে বিজয়ে’- জয় কেবল তাদেরই পদচুম্বন করে, যারা শেষ পর্যন্ত লড়াইয়ের ময়দানে দৃঢ়তার সঙ্গে টিকে থাকে। বসুন্ধরা সিমেন্ট সিরিজের খুলনা টেস্টে বাংলাদেশের জয়টা কেবল লক্ষ্যে অবিচল থাকার ফসলই। যে ম্যাচের উইকেটে বোলারদের জন্য তেমন কিছু ছিল না বলে বাংলাদেশ ও জিম্বাবুয়ে দুই পক্ষই স্বীকার করেছে। ম্যাচের পঞ্চম দিনে সেই উইকেট খুঁড়ে ১০ উইকেট শিকার করে ১৬২ রানের অসাধারণ এক জয় উপহার দিলেন সাকিব-তাইজুলরা। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে একের পর এক ম্যাচে হেসেই চলেছেন সাকিব আল হাসান। সঙ্গে আনন্দের বন্যায় ভাসিয়ে দিচ্ছেন পুরো দেশকেই। খুলনা টেস্ট জিতে বসুন্ধরা সিমেন্ট সিরিজ এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিল বাংলাদেশ। অপেক্ষা এখন চট্টগ্রাম টেস্ট জিতে হোয়াইটওয়াশের। পরিকল্পনাই কাজের অর্ধেক। ফুলপ্রুফ একটা পরিকল্পনা সফলতার জন্য খুবই প্রয়োজন। কোচ চন্ডিকা হাতুরাসিংহের এমন
ফুলপ্রুফ পরিকল্পনা ছিল বলেই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দারুণ এক জয়ে দেশের মাটিতে ৯ বছর পর টেস্ট সিরিজ জয়ের স্বাদ পেল বাংলাদেশ (২০০৫ সালে সর্বশেষ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই দেশের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা)। এর মধ্যে ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সর্বশেষ টেস্ট সিরিজ জয় করেছিলেন সাকিবরা। যে টেস্টটা একদিন আগেও নিশ্চিত ড্রয়ের পথে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছিল দুই দল, সেই টেস্টটা পঞ্চম দিনে বাংলাদেশের জন্য উন্মুক্ত করে দেয় বিজয়ের পথ। মূলত তৃতীয় দিন শেষেই বিজয়ের মঞ্জিলে পৌঁছার ছক কষেছিলেন কোচ। কিছুটা সাকিব আল হাসান স্পষ্টও করেছিলেন। যেমন চতুর্থ দিনে শুরুতেই জিম্বাবুয়েকে প্রথম ইনিংসে অলআউট করা। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংস খেলতে নেমে দ্রুত রান করা। জিম্বাবুয়ের সামনে লোভনীয় একটা টার্গেট ধরিয়ে দিয়ে তাদের পুনরায় অলআউট করা। লক্ষ্যগুলো পূরণ হয়েছে বলেই বিজয়ের আনন্দে হাসতে পারছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিন জিম্বাবুয়ের ৫ উইকেট শিকারের জন্য মাত্র ৩৭ রান খরচ করেছিলেন সাকিবরা। তারপর চতুর্থ ইনিংসে (২৪৮/৯ ডিক্লে.) ৩১৪ রানের লক্ষ্য নির্ধারণ করে জিম্বাবুয়েকে বিজয়ের লোভ দেখিয়েছিল বাংলাদেশ। পঞ্চমবারের মতো তৃতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ইনিংস ঘোষণা করল বাংলাদেশ। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২০০৪, সেন্ট লুসিয়া ও ২০১১, চট্টগ্রাম) ও জিম্বাবুয়ের (২০০৫, চট্টগ্রাম ও ২০১৩, হারারে) বিপক্ষে দুবার করে তৃতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ইনিংস ঘোষণা করেছিল বাংলাদেশ। ৩১৪ রানের লক্ষ্য  মূলত একটা টোপ ছিল ব্রেন্ডন টেলরদের জন্য। যে টোপ গিলতে গিয়ে শিকারে পরিণত হয়েছে জিম্বাবুয়ে। শুরু থেকেই ড্রয়ের লক্ষ্যে খেলতে থাকলে জিম্বাবুয়ের ১০টি উইকেট নেওয়া এতটা সহজ হতো না সাকিবদের জন্য। যেমন অধিনায়ক টেলর সংবাদ সম্মেলনে এসে বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য ছিল জয়।’ লক্ষ্য নির্ধারণে ভুলের মাশুলই দিলেন ব্রেন্ডন টেলররা। মিরপুর টেস্ট তিন দিনে জয়ের পর আরও একটা দুর্দান্ত জয়। তবে এ জয়ের সঙ্গে মিশে আছে পুলকিত হওয়ার মতো অসংখ্য বিষয়। যে রেকর্ডগুলো বহু বছর পরও স্মরণ করবেন বাংলাদেশের ক্রিকেট ভক্তরা। যেমন সাকিব আল হাসান টেস্টে এক ম্যাচে সেঞ্চুরি (১৩৭) এবং ১০ উইকেট (৫/৮০ ও ৫/৪৪)  সংগ্রহের গৌরব অর্জন করলেন। তিনি স্থান পেয়েছেন ইংলিশ কিংবদন্তি ইয়ান বোথাম এবং পাকিস্তানি কিংবদন্তি ইমরান খানের পাশে। ১৩৭ বছরের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে কেবল এ দুজনই এক ম্যাচে সেঞ্চুরি এবং ১০ উইকেট শিকারের গৌরব অর্জন করেছেন। রেকর্ড তো আরও আছে। মুমিনুল ১১ ম্যাচে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করে ছাড়িয়ে গেলেন তামিম ও বাশারকে (দুজনেই ১৫ ম্যাচে হাজার রান করেছেন)। খুলনা টেস্টের শেষ দিনে নাটক অপেক্ষা করছিল অবশ্যই। বাংলাদেশের জয়ের পাল্লা ভারী থাকলেও কেউই জোর দিয়ে জয়ের ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারছিল না। ক্যাচ মিস মানে তো ম্যাচ মিস। এই প্রবাদটা স্মরণে রেখে অনেকেই দেখছিলেন ভিন্নচিত্র। ক্রিকেটীয় নাটকের শেষ দৃশ্যটা আঁকলেন অবশ্য অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। তাইজুলের ঘূর্ণি বল ব্যাকফুটে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়েন চাতারা। আম্পায়ার বিলির আঙ্গুল বাঁকা হয়ে আকাশের দিকে উঠতেই স্ট্যাম্প হাতে নিয়ে লাফিয়ে উঠলেন মুশফিকুর রহিম। তিনি এখন বাংলাদেশের সর্বোচ্চ টেস্টজয়ী অধিনায়ক (৩টি)। অধিনায়ক হিসেবে একটি করে টেস্ট ম্যাচ জয় করেছেন হাবিবুল বাশার, মাশরাফি বিন মর্তুজা এবং সাকিব আল হাসান। সর্বোচ্চ টেস্টে অধিনায়কত্ব করার রেকর্ডটাও চট্টগ্রামে নিজের করতে যাচ্ছেন মুশফিক (১৯তম)। বর্তমানে ১৮টি করে টেস্টে অধিনায়কত্ব করে পাশাপাশি অবস্থান করছেন মুশফিক-বাশার। জয়োৎসবের যে মঞ্চ প্রস্তুত করেছিল খুলনাবাসী তা কাজে লাগল। উৎসবের রঙে রাঙিয়ে দুরন্ত এ জয়টা খুলনা টেস্টের সব ভুলভ্রান্তি ধুয়ে-মোছে সাফ করে দিল। তবে এই ভুলগুলো থেকে মুক্তি না পেলে ভবিষ্যতে এমন অর্জন কঠিনই হবে। অধিনায়ক মুশফিক দৃঢ়কণ্ঠে শুনিয়ে গেলেন ভুল থেকে মুক্তির পথই খুঁজে ফিরছে তার দল। এই ভুল থেকে মুক্তির মাধ্যমেই চট্টগ্রাম টেস্টও জয় করতে চান তিনি। আরও একবার প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার আনন্দে মেতে উঠতে চান মুশফিকরা।

No comments:

Post a Comment