জাতীয় স্মৃতিসৌধ তৈরি হয়েছিল যার নকশায়, সেই স্থপতি সৈয়দ মাইনুল হোসেন আর নেই।
সোমবার দুপুরে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৬২ বছর।
হাসপাতালের পরিচালক আবদুল্লাহ আল শাফি মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাইনুল হোসেন হার্ট অ্যাটাক নিয়ে গতকাল ভর্তি হয়েছিলেন। উনার রক্তচাপেরও সমস্যা ছিল। আজ বেলা আড়াইটায় উনার মৃত্যু হয়।
জীবনের শেষ দিনগুলোতে মানসিকভাবেও পুরোপুরি সুস্থ ছিলেন না মাইনুল। প্রচারের আড়ালে একেবারেই নিভৃতে একাকী জীবন বেছে নিয়েছিলেন তিনি।
স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন জানান, মাইনুল হোসেনের মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট থেকে নেওয়া হবে তার শান্তিনগরের বাসায়। রাতে রাখা হবে বারডেম হাসপাতালের হিমঘরে।
তার বন্ধু ও এক সময়ের সহপাঠী স্থপতি বদরুল হায়দার জানান, মাইনুল হোসেনের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তিনি দেশে ফিরলেই দাফনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
মুক্তিযুদ্ধের শহীদের স্মৃতি ধরে রাখতে সরকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের পরিকল্পনা নিলে ১৯৭৮ সালে নকশা আহ্বান করা হয়। জমা পড়া ৫৭টি নকশার মধ্যে বাঙালির স্মৃতির মিনোরের জন্য নির্বাচিত হয় ২৬ বছরের তরুণ মাইনুল হোসেনের পরিকল্পনা।
তার নকশা অনুযায়ী স্মৃতিসৌধের বেদীমূল থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে সাতটি ত্রিকোণ কলাম, যার মধ্যে সবচেয়ে বড়টি ১৫০ ফুট উঁচু। এই সাতটি কলামে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের সাতটি পর্যায় সূচিত হয়েছে। আকার আকৃতিতে ভিন্নতা থাকায় একেক দিক থেকে স্মৃতিসৌধকে দেখায় একেক রকম।
১৯৭৬ সাল থেকে ২২ বছরের কর্মজীবনে সৈয়দ মাইনুল হোসেন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নকশার কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন। এর মধ্যে ভোকেশনাল টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ও ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (১৯৭৭), বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন (১৯৭৮), চট্টগ্রাম ইপিজেড কার্যালয় (১৯৮০), জাতীয় যাদুঘর (১৯৮২) ও উত্তরা মডেল টাউন (১৯৮৫) এর নকশাও রয়েছে।
মাইনুল হোসেনের জন্ম ১৯৫২ সালে, মুন্সীগঞ্জের টঙ্গীবাড়ীতে। ১৯৭০ সালে তিনি যখন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগে ভর্তি হন, বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির আন্দোলন তখন তুঙ্গে।
স্বাধীন দেশে ১৯৭৬ সালে স্থাপত্যবিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রি পান মাইনুল হোসেন। ইএএইচ কনসালটেন্ট লিমিটেড নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কর্মজীবন শুরু করলেও কয়েক মাসের মধ্যে তিনি যোগ দেন বাংলাদেশ কনসালট্যান্ট লিমিটেডে।
এরপর ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এই স্থপতি, নকশা করেছেন বহু গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার। আর এর স্বীকৃতি হিসাবে ১৯৮৮ সালে সরকার তাকে একুশে পদকে ভূষিত করে।
No comments:
Post a Comment