ইউক্রেইনের সঙ্কটকে ঘিরে পূর্ব-পশ্চিমের উত্তেজনা বিশ্বকে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের হুমকির দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে সতর্ক করেছেন সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতা মিখাইল গর্বাচেভ।
১৯৮৯ সালের ৯ নভেম্বর বার্লিন প্রাচীরের পতনের মধ্যে দিয়ে পূর্ব ও পশ্চিম জার্মানির পুনর্মিলন ঘটে। বার্লিন প্রাচীরের পতন এখন স্নায়ুযুদ্ধের অবসানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল প্রায় পুরো বিশ্ব। সেই
সময় এই দুই শিবিরের মধ্যে শুরু হয় সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ক্ষমতার প্রতিযোগীতা। এই প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা শিবির ও সোভিয়েত নেতৃত্বাধীন পূর্ব শিবিরের মধ্যে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে।
১৮৮৯ সালে বার্লিন প্রাচীর পতন সেই স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের ক্ষণ হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। তৎকালীন সোভিয়েত নেতা গর্বাচেভের রাজনৈতিক সংস্কার কর্মসূচী ‘গ্লাসনস্ত’র মাধ্যমে পূর্ব-পশ্চিমের সম্পর্কের বরফ গলার মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধ অবসানের সূচনা হয়েছিল।
পরে গ্লাসনস্তের পথ ধরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলোতে কম্যুনিস্ট শাসনের অবসান হয়। এভাবে পূর্ব শিবিরের বিলুপ্তির মধ্য দিয়ে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হয়।
বার্লিনের ভাষণে সেই গর্বাচেভ পশ্চিমা বিশ্বকে, বিশেষভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে ১৯৮৯ সালে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ না করার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর রাশিয়ার দুর্বলতাকে ব্যবহার করে পশ্চিমা শক্তিগুলো নিজেদের ফায়দা তুলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
৮৩ বছর বয়সী গর্বাচেভ ইউরোপকেও এর ভূমিকার জন্য সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, বিশ্ব শক্তি হিসেবে ইউরোপের ভূমিকা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে এবং ইউরোপ নিজেই বিপদের মধ্যে আছে।
তিনি বলেন, “বিশ্ব ব্যবস্থায় পরিবর্তনের নেতা হওয়ার বদলে ইউরোপ রাজনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত একটি এলাকায় পরিণত হয়েছে।”
“সাফল্যের মোহ পশ্চিমা নেতাদের মাথায় ভর করেছিল। রাশিয়ার দুর্বলতার ও শক্তি ভারসাম্যহীনতার সুবিধা গ্রহণ করে তারা বিশ্বব্যাপী একচেটিয়া নেতৃত্ব ও কর্তৃত্ব কায়েম করেছিলেন, সতর্কতার বাণীতে মনোযোগ দেয়ার দরকার মনে করেননি তারা,” বলেন তিনি।
ন্যাটোর সম্প্রসারণ, সাবেক যুগোশ্লাভিয়ায়, ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়ায় পশ্চিমাদের ভূমিকা, রুশ সীমান্তে অদূরে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার পরিকল্পনা ইত্যাদি ভুল পদক্ষেপ রাশিয়াকে ক্ষুব্ধ করে তুলে বলে জানান গর্বাচেভ।
তিনি বলেন, “এর ফলাফলে একটা সামান্য আচর এখন রক্তাক্ত ক্ষতে পরিণত হয়েছে। আর এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ইউরোপ।”
“নতুন স্নায়ুযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে বিশ্ব। কেউ কেউ বলেন, এটি ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।”
“এখন, পরিস্থিতি যখন নাটকীয় মোড় নিয়েছে, আমরা প্রধান আন্তর্জাতিক পরিষদ, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদকে কোনো দৃঢ় ভূমিকা পালন করতে দেখছি না,” বলেন তিনি।
No comments:
Post a Comment